অরাজকতা

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৪:২৮

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


সাজ্জাদুল করিমঃ
মহেশখালী। কক্সবাজার জেলার প্রসিদ্ধ এক উপজেলা। যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। দৃষ্টিনন্দন ও নয়নাভিরাম। এখানে রয়েছে বিশ্বখ্যাত মৈনাক পাহাড় ও আদিনাথ মন্দির। যা নিয়ে অনেক মিথ প্রচলিত। আর আছে বঙ্গোপসাগরের অপার সৌন্দর্য। ফলে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে। বিশেষত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। শীত মৌসুমে।

কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্রে থাকে মহেশখালী। স্হানীয়রা তো আছেই। ফলে কক্সবাজার -মহেশখালী ঘাটে প্রতিদিন পারাপার হয় হাজারো মানুষ। এপার -ওপার প্রতিদিন পার হয় চাকুরীজীবী, ছাত্রছাত্রী, রোগী ও শতশত সাধারন মানুষ। হাজারো এই যাত্রী পারাপারকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে একাধিক চক্র বা সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট রয়েছে বোটমালিক,বোটচালক,জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কতিপয় অসৎ ব্যক্তি।

এই সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছে মহেশখালীর লাখো জনগনকে। বিগত ২৫/১২/২০২০ইং। সকাল ৯:৩০ ঘটিকা। কক্সবাজার পৌরসভার ৬নং জেটি ঘাট। ঘাটে যাত্রী শ’খানেক। স্পীড বোটও রয়েছে প্রায় তার সমপরিমাণ। তবে সব বোট ঘাটে বাঁধা। সুন্দর ও সারিবদ্ধভাবে। কিন্তু কোন স্পীডবোটই যাবে না। স্হানীয়দের নিবে না। কেন নিবে না তারও কোন সদুত্তর নেই। স্হানীয়রা যে এখানে অপায়া, অপাংক্তেয়।

তবে পর্যটকদের জন্য বোটের অভাব নেই। পর্যটকেরা আসা মাত্রই বোট পেয়ে যাচ্ছে। কারন, তাদের বহন করলে পাওয়া যায় বেশি টাকা। ডবল কিংবা ত্রিপল। আর পর্যটকদের প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াও বেশ সহজ।

প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনদের জন্যও বোটের অভাব নেই। অপেক্ষা করতে হয় না তাদের। আমার সামনেই আসলেন এক প্রভাবশালী। ক্ষমতাধর এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধির ভাই। যাত্রীদের হাহাকারের মধ্যেই প্রায় রকেট গতিতে তাকে দেওয়া হল বোট। চকচকে স্পীডবোট। যাত্রীদের দঃখ দুর্দশাকে যেন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তিনি চললেন প্রমোদ বিহারে। সঙ্গে ফটোসেশনও। দলবলসহ।

আমরা যারা সাধারন যাত্রী,তারা চেয়ে আছি তীর্থের কাকের মত। স্পীডবোটের প্রতীক্ষায়। বহু কাঙ্ক্ষিত স্পীডবোট। বোট আসে,বোট যায়। এই যাওয়া আসার মধ্যে কেটে যায় ঘন্টা দেড়েক। কিন্তু সাধারন যাত্রীর জন্য নেই কোন বোট। স্পীডবোট যেন সোনার হরিণ। দুষ্প্রাপ্য। এস টি স্যামুয়েল কোল্ডরিজের একটি কবিতার মত,
Water, water, water every where. but there were not a drop to drink.

এই নৈরাজ্য, অরাজকতা দেখে মনেই হয়নি,৬নং জেটি ,মহেশখালী জেটিঘাট সার্বভৌম বাংলাদেশের একটি অংশ। কারন,বাংলাদেশের আইন -বিধিবিধান এখানে অচল। বড়ই বেমানান। এই অংশ যেন মগের মুল্লুক! আর এখানে চলছে রাম রাজত্ব! শিশু,পীড়িত, অসুস্হ, বৃদ্ধ, বয়স্কদের জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। বোট, বোটের আসন বন্টনে নেই কোন সাম্য,সমতা। সবকিছুই যেন চলছে অদৃশ্য শক্তির যাদুকরী ইশারায়। জোর যার,মুলুক তার- এই নীতিতে।

যাত্রীদের এই জিম্মিদশা চলছে বছরের পর বছর। যুগের পর যুগ। বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। বাংলাদেশও সমানতালে এগিয়ে চলছে। কিন্তু এখানে সময় যেন চলেছে, ইতিহাসের উল্টোদিকে। দেখার কেউ নেই। প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি সবাই নিশ্চুপ। যেন তারা কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন। উল্টো তাঁরা মদদ দিচ্ছে এ নৈরাজ্য, অরাজকতায়।

যখনই কোন কোন প্রতিবাদ আন্দোলনে হয়, তাঁরা দেন নানা প্রতিশ্রুতি। কত মনভোলানো প্রতিশ্রুতি! ফেরি করবেন, ব্রীজ করবেন! মহেশখালী হবে হংকং, সিঙ্গাপুর! মুখরোচক জনতুষ্টির সব প্রতিশ্রুতি। কিন্তু সব প্রতিশ্রুতি ঐ প্রতিবাদ, আন্দোলন পর্যন্তই। প্রতিবাদ স্তিমিত হলে সবই অতীত।

ঘাটে এ অরাজকতার জন্য দায়ী কে? স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেল,বিস্ময়কর সব তথ্য। এ জন্য দায়ী মুলত প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধি। তিনি, তাঁর পরিবার মুলত কক্সবাজার- মহেশখালী ঘাটকে জিম্মি করে রেখেছে। যুগের পর যুগ ধরে।

সরকার বদল হয়। বদল হয় ক্ষমতার। কিন্তু তাঁর রাজত্বের যেন শেষ হয় না। সরকারে যে দলই থাকুক,তিনি ও তাঁর পরিবার সব সময়ই ক্ষমতাধর। রসিকতা করে অনেকেই বলেন, প্রেজেন্ট গভর্নমেন্ট পার্টি।

এরা জনগনের সেবক না শোষক? এর বিচারের ভার মহেশখালীর সাধারন জনতার। শোষিত,নির্যাতিত জনগনের। সামনে নির্বাচন। হয়তবা দলীয় বাতাবরণে, জনপ্রিয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির পসরা ছড়াবেন। ভোট চুরি করবেন। ভোট ডাকাতির চেষ্টা করবেন। নির্বাচিত হয়ে আবার কায়েম করবেন রাম রাজত্ব। ফলে জুলুম, নির্যাতন,নিপীড়ন হবে দীর্ঘায়িত।

কিন্তু শেষ বিচারে “জনগনই সকল শক্তির উৎস”। তাই এখন থেকেই নিপীড়ন,নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কথায় বলে “Hit the iron,when it is hot”. তাই এখনই মোক্ষম সময় প্রতিরোধের। তা না হলে জনদুর্ভোগ বাড়বে, বৈ কমবে না।

ধন্যবাদ সবাইকে।

সাজ্জাদুল করিম
সিনিয়র আইনজীবী
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।